বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৪১ অপরাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ রাজধানীসহ সারা দেশে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ক্রমাগত বাড়ছে অপরাধ। পারিবারিক কলহ, পূর্বশত্রুতার জের, সম্পর্কের অবক্ষয়, পরকীয়া, ব্যাবসায়িক ও ব্যক্তিস্বার্থের দ্বন্দ্ব, ছিনতাই, মামুলি বিষয় নিয়ে কথা-কাটাকাটি, এমনকি ঝগড়া-বিবাদ থামাতে গিয়েও একের পর এক ঘটছে হত্যাকাণ্ড। আহত হচ্ছে অনেকে।
রাজধানী ঢাকায় গত দুই মাসে (জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি) তুচ্ছ ঘটনায় অন্তত ৩৬টি প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে পারিবারিক কলহের কারণে ১৭ প্রাণহানির মধ্যে আটটিই ছিল আত্মহত্যা। এভাবে সারা দেশেই অপ্রীতিকর ঘটনা বাড়ছে। ফলে ব্যক্তিগত ও সামাজিক নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে মানুষ। এভাবে অপরাধ বৃদ্ধির পেছনে পারিবারিক বন্ধনে ছন্দঃপতন ও প্রযুক্তির অপব্যবহারকে দায়ী করা হচ্ছে।
অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, যুগ যুগ ধরেই এমন অপরাধ ঘটে আসছে। এ থেকে উত্তরণের যুগসন্ধিক্ষণে আমরা অবস্থান করছি। সমাজের ভেতর পরিবার, প্রতিবেশী, এলাকাভিত্তিক সংস্কৃতির চর্চা ও বন্ধনগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। আকাশ সংস্কৃতির প্রভাবে পর্নোগ্রাফির ছোবল ও মাদকাসক্তির মতো বিষয়গুলো মিলে পুঁজিবাদী সমাজের প্রাথমিক অবস্থা বিরাজমান। এ অবস্থায় মানুষের লোভ-লালসা বেড়ে গেছে। উচ্চাভিলাষী জীবনযাপনে প্রতিযোগিতা বাড়ছে। সেক্সুয়াল ভায়োলেন্স, পরকীয়ার মতো বিষয়গুলোও বেড়ে গেছে। সব কিছু মিলিয়ে আগের সামাজিক অনুশাসনগুলো আর কাজ করছে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. জিয়াউর রহমান বলেন, তুচ্ছ কারণে এসব অপরাধ থেকে উত্তরণ দ্রুত সময়ে ঘটবে না। দুটি জায়গা থেকে এগুলো নির্মূল করতে হবে। প্রথমত, বিচারহীনতার সংস্কৃতি বন্ধ করে পুরো বিচারব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। অন্যায়কারীর শাস্তি হলে তা দেখে অন্যরা অন্যায় কাজে নিরুৎসাহ হবে।
জিয়াউর রহমান আরো বলেন, অনলাইনে বুঁদ হয়ে থাকলে এবং পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত হয়ে পড়লে সমাজে তাদের সৃজনশীলতা নষ্ট হয়ে যায়। আর শুধু মোবাইল ফোন নিয়ে মেতে থাকলে এই জগেক বলা যায় মানুষ ধ্বংস করে দেওয়ার জগৎ। নিত্যনতুন প্রযুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মানুষের অবসর সময় যেন ভালো কাটে এবং শুধু অনলাইনে বুঁদ হয়ে না থাকে তা নজরে রাখতে হবে। এ ছাড়া সার্বিকভাবে সাংস্কৃতিক কার্যক্রম ও খেলাধুলা একদমই নেই। তা ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে হবে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও সমাজবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, বর্তমানে হত্যা বা আত্মহত্যার মতো ঘটনা বেড়ে চলার পেছনে মূল কারণ কিছু মানুষ অতিলোভী হয়ে গেছে। করোনা মহামারির এই সময়েও মানুষ তার লোভ সংবরণ করতে পারছে না। পরকীয়া, ফেসবুকের অপব্যবহার, আধিপত্য—সার্বিক পরিস্থিতিটাই অন্য রকম হয়ে গেছে। প্রাপ্তির প্রত্যাশাটা যখন বেড়ে যায়, আর সে অনুসারে প্রাপ্তি হয় না, তখনই একটা গ্যাপ তৈরি হয়ে হতাশা জন্ম নেয়। এসব তুচ্ছ কারণে অনেকে হত্যা বা আত্মহত্যায় ঝুঁকছে। আর হত্যা বা আত্মহত্যা যেটিই হোক, প্রতিটি ঘটনার পেছনে প্ররোচনাকারী আছে। তাদের যথাযথভাবে শনাক্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা না নেওয়া পর্যন্ত এগুলো কমবে না। এ ছাড়া সার্বিকভাবে পারিবারিক বন্ধনটাও নড়বড়ে হয়ে গেছে। সেটাতে জোর দিতে হবে।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, সার্বিক দিক বিবেচনায় তুলনামূলকভাবে দেশে অপরাধপ্রবণতা অনেকটা কমে পরিস্থিতিও আগের চেয়ে ভালো। তবে ফৌজদারি অপরাধ কমলেও বেড়েছে পারিবারিক নির্যাতন। এ ছাড়া তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বেশির ভাগ পারিবারিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার ইফতেখারুল ইসলাম বলেন, একেবারে অপরাধ নেই এমনটা বিশ্বের কোথাও নেই। কারণ অপরাধ কখনো নির্মূল হয় না। তুচ্ছ ঘটনাসহ নানা কারণে যেসব খুনখারাবির ঘটনা ঘটছে তার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে ফৌজদারি অপরাধ কমেছে। তবে হ্যাঁ, নারী ও শিশু নির্যাতন বেড়েছে। অপরাধ দমনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা নির্বিঘ্নে কাজ করছেন।
Leave a Reply